Wednesday, January 18, 2017

বিষাক্ত পুরুষ Toxic Men

 যে পুরুষরা নিজেদেরকে নারীদের ওপর ক্ষমতাবান মনে করেন বা 'প্লেবয়' ধরনের আচরণ করেন তাদের মধ্যে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তুলনামূলকভাবে যারা পুরুষালি লিঙ্গ আদর্শ মেনে চলেন না তাদের মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে এবং তাদের মধ্যে অন্যের সাহায্য প্রার্থনার প্রবণতাও কম থাকে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন এর এক নতুন গবেষণা থেকে এমনটাই প্রমাণিত হয়েছে।

বিশাল পরিসরের এই মেটা বিশ্লেষণটি সোমবার জার্নাল অফ কাউন্সেলিং সাইকোলজিতে প্রকাশিত হয়। এতে পুরুষালি লিঙ্গ আদর্শ মেনে চলার সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সংশ্লিষ্টতা আবিষ্কারে পরিচালিত ৭৮টি গবেষণা ফলাফল পরীক্ষা করে দেখা হয়। প্রায় ২০ হাজার পুরুষকে সংশ্লিষ্ট করে গবেষণাগুলো চালানো হয়।

গবেষণাগুলোতে অংশগ্রহণকারীদের বেশির ভাগই ছিল শ্বেতাঙ্গ। তবে এতে আফ্রিকান-আমেরিকান এবং এশিয়ান-আমেরিকান পুরুষরাও অংশ গ্রহণ করেন।

গবেষকরা ১১টি পুরুষালি আদর্শের মানদণ্ডে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মূল্যায়ন করেন। মনোবিজ্ঞানীদের বিশ্বাস ওই ১১টি রীতি-নীতির মধ্য দিয়েই ঐতিহ্যবাহী সমাজের পুরুষালি আদর্শের প্রতিফলন ঘটে। এরপর তারা এই পুরুষালি আদর্শের সঙ্গে ইতিবাচক ও নেতিবাচক মানসিক স্বাস্থ্যগত পরিণতি এবং সাহাজ্য প্রার্থনাকারী আচরণের যোগসাজশ খুঁজে বের করেন।

পুরুষালি আদর্শের ১১ রীতি-নীতি

১. জয়ের আকাঙ্ক্ষা
২. আবেগগত নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা
৩. ঝুঁকি গ্রহণ
৪. সহিংসতা
৫. আধিপত্য
৬. যৌনতায় বাছবিচারহীনতা (প্লেবয় আচরণ)
৭. আত্মনির্ভরশীলতা
৮. কর্মের প্রাধান্য (চাকরির ওপর গুরুত্বারোপ)
৯. নারীর ওপর ক্ষমতা
১০. সমকামিতার প্রতি ঘৃণা
১১. সামাজিক মর্যাদা অর্জনের প্রচেষ্টা
পুরুষালি লিঙ্গ আদর্শ মেনে চলার সঙ্গে নেতিবাচক মানসিক স্বাস্থ্যগত পরিণতির যোগসাজশ রয়েছে। যেমন, মানসিক চাপ, অবসাদ, উদ্বেগ, নেশাদ্রব্য ভোগ এবং দুর্বল দৈহিক ভাবমূর্তি।

তবে পুরুষালি লিঙ্গ আদর্শের তিনটি রীতি-নীতির সঙ্গে নেতিবাচক মানসিক স্বাস্থ্যের শক্তিশালি যোগসাজশ দেখা গেছে। সেগুলো হলো, আত্মনির্ভরশীলতা, নারীর ওপর ক্ষমতা চর্চা এবং প্লেবয় আচরণ। আর নারীর ওপর ক্ষমতা চর্চা এবং প্লেবয় আচরণ এই দুটি রীতির সঙ্গে পুরুষালি মনোভঙ্গি এবং আচরণের সম্পর্ক সবচেয়ে শক্তিশালী।
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় ব্লুমিংটাউন এর মনোবিজ্ঞানী ড. ওয়াই জোয়েল ওঙ্গ দ্য হাফিংটন পোস্টকে বলেন, "পুরুষালি লিঙ্গ আদর্শের রীতি-নীতিগুলো লালন এবং নারীর ওপর ক্ষমতার চর্চার মধ্যে প্রতিকূল সম্পর্ক বিষয়ে আমাদের আবিষ্কার চমকপ্রদ। "
"পুরুষালি আদর্শ একটি সামজিক বেইনসাফ এবং এটি চুড়ান্ত বিচারে সকলের জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে। এমনকি পুরুষালি আদর্শ লালনকারী পুরুষরাও এর ক্ষতির শিকার হতে পারেন। "
আর সবচেয়ে বেশি সমস্যাজনক হলো, পুরুষালি আদর্শের বেশির ভাগ রীতি-নীতি মেনে চলা পুরুষরা তাদের মানসিক সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য অন্যদের সাহায্য প্রার্থনা করেন সবচেয়ে কম।
তবে সব পুরুষালি বৈশিষ্ট্যই মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। কর্মের প্রাধান্য দেওয়ার মতো আচরণের সঙ্গে ইতিবাচক বা নেতিবাচক মানসিক স্বাস্থ্যের কোনোটিরই যোগসাজশ নেই। তবে ঝুঁকিগ্রহণ প্রবণতার সঙ্গে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক মানসিক স্বাস্থ্য এই দুটিরই সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
সূত্র : দ্য হাফিংটন পোস্ট

No comments:

Post a Comment