Friday, January 20, 2017

এখন দাবি দেশে পুরুষ নির্যাতন আইন হোক

সব সময় পিছিয়ে পড়াদের দলেই নাম লিখিয়েছেন নারীরা। সমাজ, সভ্যতা এবং আমাদের চিন্তা-ভাবনাই এর জন্য মূলত দায়ী। তাই আধুনিক সময়ে নারীদের এগিয়ে আনতে চলছে নানা ধরনের চেষ্টা।


এজন্য বিভিন্ন দেশে নারীদের অধিকার রক্ষাসহ অন্যান্য সুবিধা বেশি দিয়ে পুরুষের সমান করার চেষ্টা চলছে।

এই অবস্থার বাইরে নয় বাংলাদেশও। তবে নারীদের অধিকার আদায়ে নানা আইন ও সুবিধা প্রদানের বিষয়গুলো কতটুকু সঠিক ব্যবহার হচ্ছে, সে বিষয়েই প্রশ্ন তুললেন নারায়ণগঞ্জের আবু বকর সিদ্দিক ও শেখ খায়রুল আলম।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে সবক্ষেত্রে নারী পুরুষ সমান অধিকার। নারী নির্যাতন আইন আছে, পুরুষ নির্যাতন আইন চাই।' -এমনই একটি ব্যানার নিয়ে বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ আদালতের সামনে অবস্থান নেন ওই দুই ব্যক্তি।

তাদের দাবি, নারী নির্যাতন আইনসহ অন্যান্য সুবিধা নিয়ে তাদের স্ত্রীরা উনাদের উপর নির্মম নির্যাতন। এ সময় তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে নারী নির্যাতনের শিকার আরও অনেক পুরুষ ব্যানার ধরে দাঁড়ায়।

সোনারগাঁও কাঁচপুর চেঙ্গাইন এলাকার আমির উদ্দীনের ছেলে আবু বকরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৪ সালে বন্দর লাঙ্গলবন্দ এলাকার নারগিস আক্তারকে বিয়ে করেন তিনি। আশা ছিল সুখের সংসার গড়বেন। তবে তা আর হয়ে উঠেনি।

আবু বকরের দাড়ি, টুপি ও পাঞ্জাবী পরিধান পছন্দ করতেন না তার স্ত্রী। আর এ নিয়েই অশান্তির শুরু। বিয়ের পর সাদিয়া নামে এক কন্যা সন্তান জন্ম নিলেও সুখ আর আসেনি তার জীবনে।

দুঃখের কথা জানিয়ে আবু বকর বলেন, ধীরে ধীরে স্ত্রী পরকিয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে। চলে দাম্পত্য কলহ। এক সময় আমার বিরুদ্ধে যৌতুক মামলাসহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে সে। পারিবারিক আদালতে পৃথক আরও একটি মামলা করে। ওই মামলায় আদালতের মাধ্যমে তাকে দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিতে হয়। এছাড়া চার দফা জেলও খাটতে হয়।

২০০৯ সালে র‌্যাবের এক কর্মকর্তাকে দিয়ে আমার উপর নির্যাতনও চালায় নারগিস। এখন সব হারিয়ে আমি পথে বসেছি।

ফতুল্লার ভুঁইগর পশ্চিমপাড়া এলাকার শেখ সাহা আলমের ছেলে শেখ খায়রুল আলমের গল্পটাও অনেকটাই এমন। বিশেষ আইনের সুবিধা নিয়ে তার স্ত্রীও চালিয়েছে নির্যাতন। যার কারণে আজ অনেকটাই নিঃস্ব তিনি।

খায়রুল জানান, ২০১৩ সালের ১৮ অক্টোবর একই এলাকার আজাহার মিয়ার মেয়ে শারমিন আফরোজাকে গোপনে বিয়ে করেন। কথা ছিল আফরোজার প্রবাসী ভাই ও দুলা ভাই দেশে ফিরলে বউ উঠিয়ে আনবেন। এজন্য শ্বশুরালয়ে অবস্থানকালে প্রতিমাসে বউকে খরচও দিতেন তিনি। কিন্তু ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর নিজ বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন আফরোজা। তবে তিনি নতুন সংসারে স্বাভাবিক আচরণ করতেন না বলে অভিযোগ খায়রুলের।

খায়রুল বলেন, সংসারে এসে প্রায়ই সে ঝগড়া করতো। এ অবস্থার মধ্যেই হঠাৎ ২০১৪ সালের ৩১ মে আফরোজা বাবার বাড়ি চলে যায়। সেখান থেকে তালাক ও দেনমোহর বাবদ এক লাখ টাকা দাবি করে। এজন্য লোকজন দিয়ে মারধরসহ হত্যার হুমকি ধামকিও দেয়।

এরপর একদিন ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের এসআই সোহাগ পরিচয়ে একজন ফোন দেন। তিনি বলেন, আপনার স্ত্রী আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। বাঁচতে চাইলে এক লাখ টাকা নিয়ে দেখা করুন। না হলে নারী নির্যাতন মামলা দিয়ে জেল খাটাবো।

নিজেদের দুরবস্থা ও স্ত্রীদের নির্যাতনের গল্প শুনিয়ে নির্যাতিত দুই পুরুষেরই এখন দাবি দেশে পুরুষ নির্যাতন আইন হোক। যাতে নারী নির্যাতন আইনের মিথ্যা সুযোগ নিয়ে নারীরা যাতে আর কোনো পুরুষের উপর নির্যাতন চালাতে না পারে।

পুরষ নির্যাতন আইন করে সারা বাংলার পুরুষদের বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী ব্যবস্থা নেবেন এমনটাই এখন তাদের প্রত্যাশা।

সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

No comments:

Post a Comment