Wednesday, January 18, 2017

পুরুষঃ অর্থ উপার্জনের যন্ত্র Male money machine

আমাদের মনের ভেতর যে বিষয়টি গেঁথে আছে তা হলো, যেকোনো ধরণের নির্যাতনের শিকার শুধুমাত্র নারীরাই হবে। কিন্তু কেউ কি ভেবে দেখেছেন, ঘটনাটি যদি উল্টো হয় তখন ব্যাপারটি কি দাঁড়ায়? নির্যাতন যদি পুরুষের ওপর হয়? শুধু নারীরাই নন, আমাদের সমাজে পুরুষেরাও নির্যাতিত হন ঘরে এমনকি বাইরেও। নারী নির্যাতনের ঘটনা যেমন প্রতিনিয়ত ঘটছে, ঠিক তেমনি পুরুষ নির্যাতনের মাত্রাও বেড়ে চলেছে। নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলো আমাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে মিডিয়ার ব্যাপক প্রচারে, অন্যদিকে পুরুষ নির্যাতনের ঘটনাগুলো কিন্তু আড়ালেই রয়ে যাচ্ছে। আড়ালে থাকলেও পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা কিন্তু কম ঘটছে না। বরং দিন দিন বেড়েই চলছে। যেভাবে নির্যাতিত হন পুরুষেরা পারিবারিকভাবে পুরুষেরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন। এই নির্যাতন হতে পারে শারীরিক কিংবা মানসিক। আসুন দেখে নিই কিভাবে ও কাদের দ্বারা পুরুষেরা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছেন।




আমাদের সমাজটি এমন যে এখানে পুরুষদের দেখা হয় অর্থ উপার্জনের যন্ত্র হিসেবে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে আমাদের দেশে মেয়ে সন্তানের চেয়ে ছেলে সন্তান কাম্য অনেকাংশে এই কারনেই। মেয়ে হলে বিয়ে করে চলে যাবে কিন্তু ছেলে সংসারের হাল ধরবে এই চিন্তা এখনও অনেকেই করেন। এইজন্য পুরুষদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় অনেক কিছুই কিশোরকাল থেকেই। দেখা গেলো একই পরিবারের মেয়েটি তার পছন্দের চারুকলা বিষয়ে ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে কিন্তু পছন্দের বিষয় হওয়া সত্ত্বেও ছেলেটি সেটা পারছে না। কারণ তার বাবা মা দিচ্ছেন না। চারুকলায় পরে বেশি অর্থ উপার্জন সম্ভব নয় এটিই মূল কারণ। এটিও একধরনের মানসিক নির্যাতন। এছাড়া আরও একটি নির্যাতন বাবা মায়েরা করে থাকেন তা হল বিয়ের ব্যাপারে। জোর করে শুধুমাত্র মেয়েদেরই বিয়ে দিয়ে দেয়া হয় না। ছেলেদেরও এই নির্যাতন সহ্য করতে হয়। অনেক সময় নিজের মত না থাকলেও বাবা মায়ের চাপে পরে বিয়ে করতে হয় অনেককে।



পুরুষেরা ঘরে নির্যাতনের পাশাপাশি বাইরেও নির্যাতিত হন নিজের শ্বশুর বাড়ির লোকজন ও সমাজের দ্বারা। পারিবারিক পর্যায়, চেহারা, উচ্চতা, চাকরির বেতন ইত্যাদি অনেক কিছু নিয়ে হাসির ছলেই অনেকে খোঁচা দিয়ে কথা কথা বলেন। সব সময় কিছু না কিছু নিয়ে তারা হেয় প্রতিপন্ন করে যাচ্ছে। নারীদের ক্ষেত্রে এই ধরণের প্রবনতা নেই। কিন্তু এ ধরনের কথা বার্তা ও আচরণও মানসিক নির্যাতনের মধ্যে পরে।



পুরুষ নির্যাতনের সমস্যাটি এত গুরুতর হওয়ার প্রধান কারন হচ্ছে এই সব নির্যাতিত পুরুষেরা ন্যায় বিচার পাচ্ছেন না। নানা কারনে প্রতিদিন চুপচাপ নির্যাতন মেনে নিচ্ছেন অনেকেই। দেখে নিন কেন পুরুষ নির্যাতনের ঘটনাগুলো আড়ালে পরে যায়।



একজন পুরুষ নারী দ্বারা শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন এই ঘটনা কোন পুরুষ নিজে মুখে বলতে লজ্জাবোধ করেন আমাদের সমাজ ব্যবস্থার কারণে। সেজন্য পুরুষেরা ভাবেন নারী দ্বারা শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন এটি প্রকাশ পাওয়া তার জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। শুধুমাত্র এই কারনে পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা ধামাচাপা দেয়া হয়। একজন পুরুষ যখন একটি নারীর ওপর নির্যাতন চালিয়ে সেটা জাহির করে তখন কেও তাকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ না করলেও যে পুরুষটির ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে তাকে ঠাট্টা বিদ্রুপ করতে কেউ ছাড়ে না। গত বছর ভারতের একটি প্রদেশে বেঙ্গালুরুর মনোজ কুমার নামে একজন ভদ্রলোক পুলিশের কাছে মামলা দায়ের করতে আসেন তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। তিনি পুলিশকে জানান তার স্ত্রী তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। তখন দায়িত্বরত পুলিশ মামলা নিতে শুধুমাত্র অস্বীকৃতি জানানো নয় তাকে নিয়ে উপস্থিত সকলের সামনে ঠাট্টা বিদ্রূপ করেন। আমাদের সমাজ নির্যাতিত নারীর প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও নির্যাতিত পুরুষের দিকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখে। কোনভাবে নির্যাতনের ঘটনা বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয় স্বজনদের কাছে প্রকাশ পেলে সহানুভূতির পরিবর্তে ঠাট্টা বিদ্রূপও নির্যাতিত পুরুষদের সহ্য করতে হয়।



পরিবারের মুরুব্বীদের সহযোগিতার অভাবে পুরুষেরা চুপচাপ অনেক কিছুই মেনে নেন। নিজের ইচ্ছা ও শখ বিসর্জন দিয়ে না চাইলেও অনেক কিছু মেনে নেন অনেকে। দুঃখের ব্যাপার হল এই যে পারিবারিক এই নির্যাতন কাউকে বলাও যায় না। আড়ালেই রয়ে যায়।



অনেকে পুরুষই নিজের স্ত্রীর দ্বারা নির্যাতন সহ্য করে নেন মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে যাওয়ার ভয়ে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে যদি কেউ তার স্ত্রীর সাথে সম্পর্কছেদ করতে চান সেক্ষেত্রে অন্যভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয় পুরুষদেরকে। একজন নারী যখন তার স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন এবং সম্পর্কছেদ করতে চান তখন নিয়ম অনুযায়ী সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়। কিন্তু একজন পুরুষ তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে চাইলে মামলা নেয়া হয় না। যদি সম্পর্কছেদ করতে চান তবে উল্টো মামলায় জড়িয়ে যাওয়ার ঘটনাও কম নয়। অনেক সময় নির্যাতিত স্বামী স্ত্রীর সাথে সম্পর্কছেদ করতে চাইলে স্ত্রী তার বিরুদ্ধে মিথ্যা নির্যাতনের মামলা দায়ের করে বিবাহবিচ্ছেদের টাকা দাবি করেন। এমনকি মিথ্যা মামলা দায়ের করে সন্তানের কাছ থেকেও বিচ্ছেদের মত ঘটনার নজির রয়েছে।



সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। নারী নির্যাতন হলে যেমন ভাবে তা একটি অপরাধ হিসেবে দেখা হয়, পুরুষ নির্যাতনের ক্ষেত্রেও তা হতে হবে।

No comments:

Post a Comment