Friday, January 20, 2017

পুরুষদের নির্যাতিত করছেন নারীরা

আমার স্ত্রীর নাম জেসমিন আক্তার। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর স্ত্রীর নামে ফ্ল্যাট, গাড়ি কিনে দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে তার পরিবার। তাদের প্রস্তাবে রাজি না হলে আমার পরিবারের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইনে মামলা করার হুমকি দেয়। এমনকি আমাকে তালাক দেয়ারও হুমকি দেয় আমার স্ত্রী। বাধ্য হয়েই আদালতে স্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা করেছি। আদালতের কাছ থেকে ন্যায়বিচার পেতে চাই।

সম্প্রতি যুগান্তরের কাছে কথাগুলো বলছিলেন সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. এএসএম নাজমুল ইসলাম। আর বিচার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নানাভাবে পুরুষদের নির্যাতিত করছেন নারীরা। বিশেষ করে পুরুষদের ঘায়েল করতে যৌতুককে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন অনেক নারী। তাদের যৌতুকের লোভের বলি হচ্ছেন অসংখ্য পুরুষ। যে কারণে ভাঙছে সংসার। তৈরি হচ্ছে পারিবারিক অস্থিরতা। এছাড়াও সম্পত্তির লোভে অনেক নারী প্রতারণার ফাঁদে ফেলছেন পুরুষদের। ডাক্তার নাজমুলের মতো নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেক পুরুষ বাধ্য হয়েই আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন। গত দশ বছরে শতাধিক পুরুষ ঢাকার বিভিন্ন নিু আদালতে নারীদের বিরুদ্ধে যৌতুক ও প্রতারণা মামলা করেছেন, যা বিচারাধীন।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী গত ১৯ জুলাই টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, নারীদের বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা করছেন পুরুষেরা, বিষয়টা দুঃখজনক। তবে সত্য কথা যে, অনেক মেয়ে একটার পর একটা বিয়ে করে যাচ্ছে। মেয়েরাও ছেলেদের ব্ল্যাকমেইল করছে। নিরীহ অনেক ছেলেকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে তারা। অনেক নারী বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার কারণে অকালেই ভাঙছে সংসার। নারী ও পুরুষ যেই অপরাধী হোক তাদেরকে আইনের আওতায় আনা দরকার।ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মহসিন মিঞা যুগান্তরকে বলেন, অনেক নারী পুরুষকে নির্যাতিত করছেন। এ ধরনের ঘটনা বর্তমান সমাজে ঘটছে। এমন অনেক নারী আছেন যারা সমাজের নিয়মকানুন মানছেন না। পুরুষকে হয়রানি করছেন। নারী কিংবা পুরুষ যেই অপরাধ করুক তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।যৌতুক নিরোধ আইনের চার ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ক্ষেত্র মতে বর বা কনের পিতামাতা বা অভিভাবকের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো যৌতুক দাবি করে, তাহলে সে পাঁচ বছর মেয়াদ পর্যন্ত বর্ধনযোগ্য এবং এক বছর মেয়াদের কম নহে, কারাদণ্ডে বা জরিমানায় বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হবে।ঢাকার ২৮ নম্বর মহানগর হাকিম আদালতে বিচারাধীন ২৫৩/১৩ মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে জানা গেছে, ছাব্বিশ বছর বয়সী যুবক শামসুর রহমান শামছু।

রাজধানীর শাহবাগে একটি টেলিফোনের দোকানের মালিক তিনি। ২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর নোয়াখালী জেলার আবদুল গোফরানের মেয়ে মাহমুদা আক্তার উর্মিকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। তিন লাখ টাকার দেনমোহরে তাদের বিয়ে সম্পাদিত হয়। বিয়ের পর শামসু ওয়ারীর ১০৪/১ বনগ্রাম রোডের মর্জিনা মহলে ভাড়া বাসায় উর্মিকে নিয়ে সংসার করতে থাকেন। স্ত্রীর সব লেখাপড়ার খরচ ব্যয় করেন তিনি। তারই বদৌলতে উর্মি গত বছর এইচএসসি পাস করেন। বিয়ের পর প্রায় ৪ লাখ টাকা দিয়ে সোনার গহনা কিনে দেন তার স্ত্রীকে। গত বছরের ৪ জানুয়ারি ওয়ারীর বাসায় আসে শ্বশুর গোফরান। এ সময় শামসুর কাছে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন তিনি। এই বলে হুমকি দেন যে, ৫ লাখ টাকা যৌতুক না দিলে তার মেয়ে সংসার করবে না, টাকা না দিলে তাদের মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেবেন। আর গত ২৭ এপ্রিল স্ত্রীর কাছে অনেক অনুনয় বিনয় করে শামসু বলেন যে, তার সঙ্গে সংসার করতে। সেদিন তার স্ত্রী শামসুকে জানিয়ে দেন যে, ৫ লাখ টাকা না দিলে সে সংসার করবে না।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শামসুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ভালোবেসে আমি আমার স্ত্রীকে বিয়ে করেছিলাম। অনেক কষ্ট করে তাকে লেখাপড়া করিয়েছি। সেই স্ত্রী ও তার বাবা আমার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছেন, যা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আমার স্ত্রী ও শ্বশুরে এখন একটাই দাবি, ৫ লাখ টাকা দিলে আমার সঙ্গে সংসার করবে সে। আদালত এর বিচার করবেন। শামসুর রহমানের আইনজীবী প্রকাশরঞ্জন বিশ্বাস যুগান্তরকে বলেন, হয়রানির জন্য অনেক নারীই আদালতে পুরুষদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করছেন। আমার পেশাগত জীবনে এ ধরনের অনেক ঘটনা দেখেছি। যৌতুক না দেয়ার কারণে অনেক নারী পুরুষকে তালাক দিচ্ছেন। এভাবে অনেকের সংসার ভাঙছে, যা কারো কাম্য নয়।আরেকটি মামলার নথিপত্র পর্যালোচনায় করে জানা যায়, হাবিব আমেরিকার নাগরিক। আর তনুজা বাংলাদেশী নাগরিক। ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের মধ্যে সম্পর্ক হয়। তনুজা ও হাবিবের মধ্যে বিয়ে হয় ২০১১ সালের ১৭ মে। ১১ লাখ টাকা দেনমোহরে দুজনের মধ্যে বিয়ে সম্পাদিত হয়। বিয়ের কিছুদিন পর তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। পরবর্তীতে গত বছরের মে মাসে তনুজা হাবিবের বিরুদ্ধে একটি প্রতারণার মামলা করেন। সেই মামলা তদন্ত করে সিআইডি তনুজার প্রতারণার মামলাকে মিথ্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে। মিথ্যা মামলার দায়ে তনুজার বিরুদ্ধে হাবিব আদালতে মামলা করেন। সেই মামলায় তনুজা গ্রেফতার হন। পরবর্তীতে তিনি জামিন পান।মামলার ব্যাপারে হাবিব যুগান্তরকে বলেন, তনুজা আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে সুবিধা নিতে চেয়েছিল। আমাদের বিয়ের কাবিন ছিল ১১ লাখ টাকা। অথচ সে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ১১ লাখকে ১ কোটি ১১ লাখ টাকার জাল কাবিননামা তৈরি করে, যা সিআইডির তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করার কারণে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি। সেই মামলায় ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্যও দিয়েছি। আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি। হাবিব আরও বলেন, আমাদের বিয়ের কিছুদিন পর আমার নিজের ফ্ল্যাট তার নামে লিখে দিতে বলে। লিখে না দিলে আমাকে ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করার হুমকি দেন তনুজা। এ ব্যাপারে তনুজার আইনজীবী আবদুল হামিদ খান রানা যুগান্তরকে বলেন, তনুজা হয়রানির শিকার। তিনি কোনো জাল-জালিয়াতি করেননি। বাদী পক্ষ প্রভাব খাটিয়ে তনুজার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। হাবিবের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল যুগান্তরকে বলেন, তনুজা মৌসুমী আমার বাদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেন। সিআইডির প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই আদালত তনুজার মামলা খারিজ করে দেন। মিথ্যা মামলা করার কারণে তার বিরুদ্ধে আমরা আদালতে মামলা করেছি।


ওবায়েদ অংশুমান | প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০১৪;  দৈনিক যুগান্তর

No comments:

Post a Comment