Sunday, January 22, 2017

হাসপাতাল থেকে ভুয়া মেডিকেল সনদ এবং কাবিননামা : ভাড়াটে বাদী

 চট্টগ্রামে ভুয়া নারী নির্যাতন মামলা করে পুরুষদের হয়রানি করছে একটি সিন্ডিকেট। এসব প্রতারক নারী ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা ভাড়ায় যার-তার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়।

এমনকি হাসপাতাল থেকে তৈরি করে ভুয়া মেডিকেল সনদ এবং কাবিননামাও। পূর্বশত্রুতা, জমি নিয়ে বিরোধ, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এ ধরনের চক্রের শরণাপন্ন হয় অনেকে। তাদের ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় কারাভোগ করেন বহু নিরপরাধ মানুষ। নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার নিজাম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে নাদিরা আকতার নামের এক নারী যৌতুকের মামলা (৬১৯/১৩) দায়ের করেন আদালতে। বাদীর ঠিকানা উল্লেখ করা হয় খাগরিয়া চন্দনাইশ থানা। কিন্তু চন্দনাইশে খাগরিয়া নামের কোনো গ্রামই নেই।
 চট্টগ্রামে ভুয়া নারী নির্যাতন মামলা করে পুরুষদের হয়রানি করার প্রবণতা ইদানীং বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ধরনের ভুয়া মামলা করতে গিয়ে উল্টো ফেঁসে যাচ্ছেন বাদী পক্ষের নারীরা। কেননা তদন্ত করতে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায় না পুলিশ। তখন বিবাদী পাল্টা প্রতিকার মামলা করতে বাধ্য হন। চট্টগ্রামে মিথ্যা নির্যাতন মামলা করায় দেড় বছরে জেলে গেছেন ২১ নারী। আদালতে দণ্ডিত হয়েছেন চার নারী। হদিস পাওয়া যাচ্ছে না ১২১ মামলার বাদীর। পুরুষদের ষড়যন্ত্রের জালে ফাঁসাতে এমন একটি চক্রে আছে- সাদিয়া সুলতানা, নাদিরা আকতার, শারমিন আকতার, সুমি আকতার, শিল্পী আকতার, মাজেদা আকতার ও সাথী আকতার।
 রাউজানের সায়রা বানু। সৎ ছেলে মাহাবুবুল আলমের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। কিন্তু মাহাবুবুল নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর সায়রা বানুর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু আইনের ১৭ ধারায় প্রতিকার মামলা ঠুকে দেন মাহাবুবুল। মাহাবুবুলের মামলায় ১১ ফেব্রুয়ারি রাউজান থানা পুলিশ সায়রা বানুকে গ্রেফতার করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ তাকে জেলে পাঠিয়ে দেন।
 অপহরণ করে শ্লীলতাহানির মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রতিবেশীকে ফাঁসানোর চেষ্টা করার দায়ে চট্টগ্রাম নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল-১ গত ৩ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালীর কোকদ বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেছিলেন রাবু। বিচার বিভাগীয় তদন্তে মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পর রাবু সুলতানাকে আসামি করে ২০১৪ সালে কামাল বাদী হয়ে প্রতিকার মামলা করেন। সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে এই মামলায় ট্রাইব্যুনাল মিথ্যা মামলা দায়েরকারী নারীকে এ দণ্ড দেন। এর আগে মিথ্যা ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলা করে অন্যকে ফাঁসানোর দায়ে ২৭ আগস্ট নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকার রেহানা বিবিকে তিন বছরের সশ্রম কারাদ ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ট্রাইব্যুনাল-২। পৃথক আরেকটি মিথ্যা মামলা করার দায়ে রেহানা বিবি নামে এক নারীকে তিন বছর কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
 এভাবে মিথ্যা নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা করে পুরুষদের ফাঁসাতে গিয়ে উল্টো ফেঁসে যাচ্ছেন নারীরা। ভিকটিম পুরুষরা মিথ্যা মামলা দায়েরকারী নারীদের বিরুদ্ধে উল্টো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৭ ধারায় প্রতিকার মামলা করলে চট্টগ্রামের তিনটি নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল সেসব নারীকে দণ্ড দিচ্ছেন। আবার অনেক মামলায় বিচার শুরু করে কাউকে কারাগারে পাঠাচ্ছেন। বিচারাধীন ১১ নারী কারাগারে বন্দি রয়েছেন। সাত আসামির বিরুদ্ধে জারি হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। এ ছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল ঘিরে চট্টগ্রামে মিথ্যা মামলা করে পুরুষদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে তৎপর রয়েছে একটি সিন্ডিকেট।
 মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি থাকা নারীরা হলেন- নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার আলী নগরের বাসিন্দা সুমি আক্তার ও তার স্বামী ইব্রাহিম, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার লালানগর ইউনিয়নের একই পরিবারের তিন সদস্য মা মিরয়ন বেগম, মেয়ে আফরোজা পারভীন এবং তার বোন জাহেদা পারভীন, নগরীর নন্দনকাননের অমিতা দাশ, বন্দর এলাকার নাদিরা আকতার, শারমিন আকতার, শিল্পী আকতার, ইপিজেডের মাজেদা আকতার ও সাথী আকতার। গ্রেফতারি পরোয়ানার আসামিরা হচ্ছেন- মিথ্যা ধর্ষণ ও নবজাতক হত্যার মামলাকারী ফেরদৌসি খাতুন, ফিরোজ শাহ কলোনির বাসিন্দা লাকী বেগম ও তার স্বামী ইমরান, রৌশন আরা বেগম ও তার স্বামী শাহ আলম, মিরসরাইয়ের লতিফা বেগম ও কোতোয়ালির সাজিয়া ইসলাম।
 এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল-১-এর পিপি অ্যাডভোকেট জেসমিন আক্তার সমকালকে বলেন, `মিথ্যা মামলাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অধিকাংশ মামলাই সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ ও পারিবারিক শত্রুতার জেরে দায়ের করা হচ্ছে।`
নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল-৩-এর পিপি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম সিন্টু বলেন, `ট্রাইব্যুনাল-৩-এ পাঁচ বছরের বেশি সময় বিচারাধীন থাকা ১শ`র বেশি মামলার বাদীর হদিস নেই। আদালত থেকে সমন ইস্যুর পর থানা থেকে তাদের ঠিকানায় পাওয়া যাচ্ছে না বলে প্রতিবেদন পাঠাচ্ছে। এগুলো মিথ্যা মামলা বলে অনুমিত হচ্ছে। তাই বিচার ঝুলিয়ে না রেখে মামলাগুলো নিষ্পত্তি করে মামলাজট কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

` সূত্র: সমকাল

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সোমবার, ১০:৪০  এএম
কালুখালীনিউজ.কম

No comments:

Post a Comment